ডাকসু নির্বাচন এ বছরের মধ্যেই

ডাকসু নির্বাচন এ বছরের মধ্যেই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ( ডাকসু)’র নির্বাচন এ বছরের মধ্যেই হচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ছাত্র সংসদটিকে কার্যকর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব বেশি আন্তরিকতা না থাকলেও সরকারের সর্বোচ্চ মহল এ নির্বাচন চায় বলে নিশ্চিত হয়েছে পূর্বপশ্চিম। তবে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।  গত ২৭ বছর ধরে ছাত্র রাজনীতির সূতিকাগার ডাকসু নির্বাচন বন্ধ থাকায় ছাত্র নেতৃত্ব তেমনভাবে বেরিয়ে আসছে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলছেন, ছাত্র রাজনীতি দিয়েই এদেশের অনেক রাজনীতিবিদ নিজেকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। এ ধারা আবারো ফিরিয়ে আনতে চলতি বছর ডাকসু নির্বাচন দেয়া হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গেও সরকারের ওপর মহল থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কারণ এ নির্বাচনের কথা জানিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেও তাদের আন্তরিকতার কথা বলেছেন।

ডাকসু নির্বাচন এ বছরের মধ্যেই

এদিকে, সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভোটে নেতৃত্ব উঠে আসছে না বলেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাই বাম সংগঠনগুলো থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন চায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাব এবং প্রশাসনে ছাত্রদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা যেন না হয়-এদিক বিবেচনায় ডাকসু নির্বাচন চায় ঢাবি প্রশাসন এমন অভিযোগ করেছেন বৃহৎ ছাত্র সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতা।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। সরকার খবরদারি করেন না এখানে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই যেকোনো মুহূর্তে নির্বাচন দিতে পারে। এটাই আমাদের চাওয়া। ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলতেই আমরা ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে।

উল্লেখ্য, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কিছু কাল পরেই। এর প্রতিষ্ঠা ১৯২৪ সালে। ১৯২৪-২৫ সালে প্রথম ডাকসুর ভিপি মনোনীত করা হয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ের এই ছাত্র সংসদ জন্ম দিয়েছে অনেক প্রথিতযশা নেতার। সংগত কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর প্রতি বাংলাদেশের মানুষের একটা অন্যরকম টান আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই পৃথিবীর একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় – যেটা তার নিজের দেশকে সৃষ্টি করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ ডাকসু ৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও সামরিক তন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সাহায্য করছে এই ডাকসু।

ঢাকসুর প্রথম ভিপি (ভাইস প্রেসিডেন্ট) হিসেবে নির্বাচিত হন এসএ রারী এটি এবং জিএস (জেনারেল সেক্রেটারি) হিসেবে নির্বাচিত হন  জুলমত আলী খান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ডাকসুর ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং জিএস নির্বাচিত হন মাহবুবুর জামান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ডাকসু এক গৌরবোজ্বল ভূমিকা পালন করে। ডাকসুর নেতৃবৃন্দের সাহসী ও বলিষ্ঠ উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। পতাকা উত্তোলন করেন ১৯৭১ সালে থাকা ভিপি জনাব আ স ম আবদুর রব। আর এ সময় জিএম ছিলেন আবদুল কুদ্দুস মাখন।

ডাকসুর সবর্শেষ নিবার্চন অনুষ্ঠিত হয় আজ থেকে ২১ বছর আগে – ১৯৯০ সালে। ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসুর ও ১৮ টি আবাসিক হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ১৯৮৯ সালের ৮ ই ফেব্রুয়ারি ডাকসু ও হল সংসদের ৬ষ্ঠ নিবার্চন অনুষ্ঠিত হয়। এত ভিপি নির্বাচিত হয় সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং জিএস হন মুশতাক হোসেন।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৯০ সালের নির্বাচন ছিল ৭ম নির্বাচন। ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচনে ২৮ হাজার ৬ শত ৯০ জন ভোটারর মধ্যে ১৮ হাজার ৩৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ডাকসুর ২০ টি পদে ৪৮৯ জন এবং ১৪টি পদে ১০৪০ জন প্রার্থী সেদিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

ডাকসুর নেতৃবৃন্দের সাহসী ও বলিষ্ঠ উদ্যোগে ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। পতাকা উত্তোলন করেন ১৯৭১ সালে থাকা ভিপি জনাব আ স ম আবদুর রব। আর এ সময় জিএম ছিলেন আবদুল কুদ্দুস মাখন।

News Source : পূর্বপশ্চিমবিডি

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment